রুমা ঢ্যাং অধিকারী



কবিতা যদি একটা সৃজনশীল শিল্প হয় তাহলে কি তা শুধু স্বেচ্ছাচারীতাকেই মান্যতা দেবে! সামঞ্জস্যের সাথে নান্দনিকতার কি কোন সম্পর্ক নেই!  বর্তমানযুগে দাঁড়িয়ে ওয়েব ম্যাগাজিনগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। খুব কম সময়ে অনেক দূরবর্তী মানুষের কাছেও পোঁছে যাচ্ছে। 
বিভিন্ন সোর্স থেকে আজকাল খুব শোনা যায় যে কবিতা তো কবি তার নিজের জন্য লেখে -- কারোর ভালো না লাগলে সে এড়িয়ে যেতেই তো পারে। অবশ্যই কবি তার নিজের ভাবনা নিজের মুক্তির জন্য লেখেন।  আর কারোর ভালো না লাগলে সে এড়িয়ে যেতেও পারে।  কিন্তু এত কবি যে তাহলে বই প্রকাশ করছেন বা করতে চাইছেন তারা কাদের জন্য প্রকাশ করতে চাইছেন!  নিজের বইয়ের তাকে সেই ২০০ টা বই রেখে দেবার জন্য কি? অবশ্যই নয় তো। তাহলে সেই ঘুরেফিরে পাঠকের কাছেই দাঁড়াতে হয়।আর সেই পাঠক যদি শুধুমাত্র কবি হন আর যারা এড়িয়ে যান নি তারা শুধু থাকেন তাহলে কবিতার পরিসর ছোট হয়ে যাচ্ছে তাই নয় কি! 
কবিতা নিয়ে নাড়াচাড়া হোক, পরীক্ষানিরীক্ষা হোক কিন্তু কোথাও তো একটা সামঞ্জস্য থাকতে হবে নান্দনিকতার সঙ্গে। 
শরীরকে বাদ দিয়ে জীবন, অনুভব কিছুই হয় না কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে তো আমরা এসব জেনেও খুল্লামখুল্লা ঘোরাঘুরি তো আর করিনা। একটা শালীনতাবোধ কাজ করে। কিন্তু এমন কিছু কবিতা আজকাল সোসাল নেটওয়ার্কে ঘুরছে যেখানে রাখঢাক বলে কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। বাস্তবিকপক্ষে সেসব এড়িয়ে যেতে হয় কিছু সংখ্যক মানুষকে। তার মানে সেসব কবিতার পাঠকসমাজের কাছে একটা অদৃশ্য পাঁচিল তৈরি করে। কবি যদি এতই নিজের জন্য লেখেন তাহলে তো সেসব ডায়েরিতে লিখে রাখলেই হয় প্রকাশ করতে যাওয়া কেন!  জীবনের স্বার্থে সেরকম কিছু ভাবনা হয়ত আসতেই পারে যা প্রকাশ্য হওয়ার দরকার কবিতার মধ্যে কিন্তু তাকেও পোশাক পড়ানো যায় এবং সুন্দর একটি উপস্থাপনাও করেও যে স্বাদ পাওয়া যায় যে ভাবনার খোরাক পান পাঠক তা তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারেন আর ঠিক সেখানেই তো সার্থকতা। একবার ভেবে দেখবেন।
এটা ঠিক যে মানুষের মধ্যে সবসময় এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কাজ করে। সময়কে যদি চাকা দিয়ে বোঝাই তাহলে মানুষ তার আরোহী। চাকার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও আমাদের চিন্তা ভাবনা কিন্তু এককাটি এগিয়ে থাকতে চায় অর্থাৎ নিজেকে সময়ের থেকে এগিয়ে আপডেট রাখার ঝোঁক। আর সেটাই তো মুক্ত পবন যেখানে বেরিয়ার নেই কিন্তু নান্দনিকতার অভাবও নেই। কবিতা চিন্তা ভাবনা কল্পনা প্রসূত যা একটা মন থেকে বেরিয়ে আরও অনেক মনের সাথে রিলেশন গড়ে তবেই কবিতা হয়ে ওঠে সার্বজনীন।  জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্টও পরিষ্কার করে বলেছে পাঠকের স্পেস থাকার কথা। একথাও জিরো বাউন্ডারি কনসেপ্ট বলেছে যে কবিতার মধ্যে হৃদয় ব্যাপার যেটা হারিয়ে যেতে বসেছে তাকে প্রতিষ্ঠা করার কথা। তাহলে আসুন মুক্ত চিন্তাকে যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে হৃদয়গ্রাহী কবিতা লিখি। 
'জিরো বাউন্ডারি কবিতা'-র প্রথম সংখ্যা প্রকাশ হবার পর খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এতে আমাদের উৎসাহ আরও দুগুন হয়েছে যেটা আমি কাজে লাগাতে চেয়েছি দ্বিতীয় সংখ্যায়। দ্বিতীয় সংখ্যার জন্য প্রচুর কবিতা জমা পড়েছিল তার মধ্যে থেকে বেছে আমরা ৬৩ টা কবিতা প্রকাশ করেছি।  জিরো বাউন্ডারি কবিতা লেখা চাওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত কখনও অন্য কোন গ্রুপের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে নি। এটাই জিবাকের সাফল্য যে এত মানুষ জিবাকের সাথে আছেন। আমি আশা রাখি যাদের লেখা মনোনীত হয় নি তাদের কবিতাও একদিন প্রকাশ হবে এই প্ল্যাটফর্মে।  আপনারা জিবাকে কনসেপ্ট পড়ুন ও পড়ান এবং আমাদের পত্রিকায় কিরকম লেখা প্রকাশ হয় দেখে আমাদের কাছে কবিতা জমা করুন। 
বর্তমানসময়ে আমরা বেশ কিছু শক্তিশালী কবিকে হারালাম যেমন হারালাম ডাক্তার গদাধর দাসকে যিনি জিবাকের প্রবল সমর্থক ছিলেন। আমরা শোকাহত।  তবুও তো কাজ করে যেতে হয়। এবারের সংখ্যায় বিশেষ বিভাগে তাঁকে স্মরণ করে তাঁর নিজের কবিতা কিছু রাখা হল। আগামী সংখ্যাও তাঁকে স্মরণ করে তাঁর নামে হবে এবং বিশেষ ক্রোড়পত্র বিভাগ থাকবে। 
জিবাকের লেখক ও পাঠকবৃন্দ সকলেই অভিনন্দন ও অনেক শুভেচ্ছা। শীতের নরম রোদের সাথে ধুলো মেখে ওড়ার দিন এসে গেছে।  তাই সকলে সুস্থ থাকুন,  ভালো থাকুন এবং অপরকেও ভাল রাখুন, ভালো মানুষের পরিচয়ে পৃথিবীতে একঝাঁক কবির ডানা উড়ুক। 


ছবি- রুমা ঢ্যাং অধিকারী




0 comments:

Post a Comment