তৈমুর খান



যুগপুরুষ

  ধর্মনগর পেরিয়ে যাচ্ছি

পিয়াস ছিল বলছি না তা
চুল ওড়াচ্ছে যদিও হাওয়া
বাউল হয়ে বলছি কথা

আঁচড়কাটা শরীর জুড়ে কী মুদ্রণ ?
কেউ জানে না, আমিও ছিলাম ভিক্ষাজীবী
বাঁচতে বাঁচতে না বাঁচাতেই
অতর্কিতে পৌঁছে যাচ্ছি নষ্ট একটি পৃথিবী

চোখের সামনে যা দেখে খুব আহ্লাদিত
কলসি দড়ি ভাঙা খাটে গুছিয়ে জীবন
কুয়োর ধারে সূর্য কুড়োই রোজ একাকী
এমন করে দিন গেল সব সময়বিহীন

সকালগুলি নৃত্য করলো, আমিও প্রত্যাশিত
গভীর ক্ষত ঢাকতে ঢাকতে ফাগুন মাস
অপেক্ষাতে কেঁপে কেঁপে অভিন্ন মুখ
কোকিল কণ্ঠে বাজিয়ে গেলাম দূরভাষ

কাকে যেন ডেকেছিলাম, এখনও ডাকি
ডাকতে ডাকতে চোখের ভাষায় ঝরে পড়ে দূর আমলকী
বিবেক কোথায় ? হাওয়ার নূপুর গড়িয়ে দিলেই
সেই স্কুলমঞ্চ, মঞ্চে মঞ্চে সরস্বতী

রোদের পাখি উড়ছে কত, ভুলে গেছি মন্ত্রোচ্চারণ
একটি শুধু বিচ্ছিন্ন ঘর, ঘরে ঘরে নিরন্নদিন
উনুন জ্বেলে হাত-পা সেঁকে শীত এসেছে
লেপ-কাঁথা কই? ছেঁড়া তোশক তুলো ওড়ায়

বাবার দেহে কাশির দমক, ফুলে উঠছে রাতের শিরা
জাগরণের ভেতর কেহ বুলিয়ে দিচ্ছে ঘুমের মায়া
ঘুম নেই কো পড়শি দুয়ার খুলছে কপাট
তার শব্দে কোন্ নিশাচর আঁকতে গেল পরকীয়া

রাতপাহারায় কে আর থাকে ? চাঁদ গলে যায়
গলাচাঁদে শীত গুলে খায় আমার উঠোন
তালপাতা আর শুকনো নাড়ায় রাতশিহরন দাগ কেটে যায়
অর্ধঘুমের ছোট্ট পাহাড় ডিঙিয়ে জেগে উঠি আবার

কোথাও ফুল ফুটতে থাকে, দেখি নাকো ফুলের শোভা
লালঠোঁটের পাখি নামে কী সুন্দর নকশি ডানা
দেখি নাকো, কোনও অজানা জ্বরের ঘোরে পুড়তে থাকি
আবার বিকেল, আবার গোধূলি ক্লান্ত করে

কোন্ উৎসবে কী সহবৎ বুঝি নাকো
পাখির নখে আঁচড় কাটে, ঠোঁটে ঠোঁটে ছেঁড়ে পরাগ
দূরে একা ব্যথার দশক, আমাকে রাখে শূন্যে ঘিরে
কান্না শুকায় শিককাবাবে, নিজের মাংস নিজেই পোড়াই


নির্জনতা গভীর থেকে গভীরতর উভচরের নেশার মতো
স্বয়ংক্রিয় যাওয়া আসা, আলোআঁধার পাক খেয়ে যায়
স্বপ্নজীবন জীবনস্বপ্নে ঘুমনির্ঘুম ছুটতে থাকে
নদীর ঘাটে স্রোতের মতন ঢেউ ওঠে আর ঢেউ নেমে যায়

সমস্ত বিষণ্ণকালের জোনাকিরা উড়ে আসে
তাদের মৃদু আলোয় জ্বলে ওঠে যুগের হাওয়া
আমি পাই ঝিকিমিকি অন্ধ আবেগের মায়া
বাঁশপাতা উড়ে যায় কাঁদে বাঁশবন

প্রদীপে তেল নেই, ইতিহাসের বিষণ্ণ কিশোর
সব পরাজয় নিয়ে চলে যায় নির্বাসন
পিতা তবু অন্ধকারে মেপে নেয় খিদে
ঘাসকাটা জীবনের দুপুর নিভৃতে

কাঙাল আঁচলে মুখ মুছতে আসে মায়া
বেঁচে থেকে কারা রোজ দুধভাত খায়  ?
বরং মাটির গন্ধ, বরং মাথায় খালি হাত
অন্তত বেঁধে রাখে ধ্বস, দুর্যোগে ফেরায়

দিনগুলি ভেসে ওঠে, স্বপ্নের মীনগুলি ডুবে যায়
দুর্যোগের জলেইক্ষুক্ষেতের পাশে বসে থাকি
হাঁটুতোলা শাড়ি পরে আসে পাড়ার রামী
বলতে পারি না তার কাছে অবাধ্য ঘোড়ারা ঘাস চায়

মীনগুলি ঘাই মারে ; ঢেউ তোলে নিস্ফল হাওয়ায়
তার আলতা মাখা পায়ে আমার অবাধ্যতা নাচে
ইতিহাসের পাশে ধ্বংসাবশেষ গুহালিপি
পড়তে পারি না ; রোজ রোজ এইঘর নির্বাসন পাঠায়

কতদূর নির্বাসনপুর, যাই আর আসি
নিস্ফলেরা চোখ রাঙায়, দুঃখরা বাজায় বাঁশি
দেখতে দেখতে শুনতে শুনতে পেরোই যুগ
রোজ জন্মাই, রোজ মরে যাই যুগপুরুষ

হাসি তামাশা খেলতে থাকে, কিছুই রোচে না
ঘরের ভেতর ঘর নেই, বোকা ফাগুন কিছুই বোঝে না
কোকিলকণ্ঠ কল্লোলিনী কিন্নরীরা এখন কোথায় ?
যুগের ভেতর যুগান্ধকার ; ৠতুর ভেতর নষ্ট মাস


দূরে কারা পায়রা ওড়ায়? পায়রা উড়লে কী হয়?
রক্তাপ্লুত ভারী আকাশ মুখ ঘোরায়
পায়রাগুলি পতাকা হয়, পতাকায় কারা নাম লেখে ?
আমরা নাম লিখব না আর, লিখব না যুগের খাতায়





0 comments:

Post a Comment